সময় মাঝেমধ্যেই আমার ভীষণ আপন হয়ে ওঠে। আর আমি এই সুযোগে যতোটা সম্ভব বইয়ের ঘ্রাণ অনুভব করি। কবিতা, সাইকোলজি, বিজ্ঞান, সেলফ মোটিভেশন বিষয়ক বই পড়তেই বেশী পছন্দ করতাম। বইপোকারা আমার কাছে উপন্যাসের মুগ্ধতা নিয়ে আসতো। কতোশত মিথ্যা, কাল্পনিক গল্প পড়ে সময় নষ্ট করার পক্ষে আমি ছিলাম না। তবে সেই আমিই এখন উপন্যাসের প্রেমিক। চলুন অপেক্ষা বই রিভিউয়ের সাথে সাথে আমার উপন্যাসের প্রতি মুগ্ধতা কিভাবে আসলো তা ভাগাভাগি করা যাক।

বইঅপেক্ষা
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশকাল১৯৯৭
পৃষ্ঠা সংখ্যা২২০

আমার উপন্যাস যাত্রা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমি ব্যবহার করি না, তবে কোনো একসময় করতাম। তখন তীব্র শীতের নির্ঘুম রাত, অবিশ্রান্ত ভাবে তাকিয়ে ছিলাম ল্যাপটপ স্ক্রিনে। হঠাৎ ফেসবুকে এক সাইকোলজি গ্রুপের কমেন্টে অপেক্ষা বইয়ের কভার দেখতে পেলাম।

অপেক্ষা বই

ছবি: সংগৃহীত

বইয়ের কভারটা কেমন অদৃশ্য আকর্ষণ অনুভব করাতে থাকলো, ইগনোর করতে চেয়েছিলাম, তবে করতে পারিনি। বইয়ের কভার দ্বারা বিচার না করার পক্ষে তো শত যুক্তি রয়েছে, তবুও আমি বইয়ের কভার সব থেকে বেশীই পছন্দ করি। আর হাতে এক নির্ঘুম রাত ছিলো, ভাবলাম চুপিসারে বইটা পড়েই দেখি, উপন্যাসের স্বাদটা কেমন একবার অনুভব করলে তো আর খাজনা দিতে হচ্ছে না?

উপন্যাসের প্রতি মুগ্ধতা

আমার জীবনে সর্বপ্রথম পড়া উপন্যাস হলো অপেক্ষা, আর এই অপেক্ষা উপন্যাসের জাদুতে আমার উপন্যাস প্রেম সৃষ্টি হয়। তিন সত্যি, আমি আজও বলতে পারবো না যে, অপেক্ষার মতো এমন কোনো বই আমি পড়েছি যা আমার আবেগকে এতো কাছে থেকে স্পর্শ করে গিয়েছে। কি দারুন যন্ত্রণাময় রূপ এই অপেক্ষার! স্যার হুমায়ূন আহমেদের জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রইল। তার লেখা এই অপেক্ষা উপন্যাসের জন্য আজ আমি উপন্যাসের স্বাদ অনুভব করতে পারি। একটি উপন্যাসের সার্থকতার সিংহভাগ নির্ভর করে চরিত্র বিন্যাসের ওপর। আর স্যার হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা বইটিতে ঠিক তাই হয়েছে। মধ্যবিত্তের সুখ, দুঃখ, আবেগের গল্পে অসাধারণ হয়ে উঠেছে উপন্যাসটি।

অপেক্ষার পর্যালোচনা

এই মায়াময় পৃথিবীতে মানুষ কতোশত অপেক্ষা করে। প্রিয় মানুষের উপস্থিতির অপেক্ষা বোধহয় মানুষ একটু বেশীই করে? ইম্ম, তাই হয়তো অপেক্ষা হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার টনিক। গল্পের সুরাইয়াকে আমার বড্ড পছন্দ হয়েছে, বলতে গেলে আমার নেশা হয়েছিলো তার অনুভূতির উপর। কতো স্বচ্ছ এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা তার স্বামীর উপর। অপ্রতিরোধ্য ভাবে অপেক্ষা করে গিয়েছে সে। আমি ভীষণ মুগ্ধ ছিলাম তার অপেক্ষার প্রতি। হ্যাঁ মাঝেমধ্যে হয়তো আমি সুরাইয়ার চরিত্রে অভিমান জমা করেছি তবে তা চিরস্থায়ী হয়নি কারণ সে দোষী না, হ্যাঁ হয়তো আমি ঠিক বলছি, সে অপরাধী না। মেয়েটা মানসিক আঘাতের ভেতর ছিলো।

আমার প্রিয় সুপ্রভার আত্মহত্যা আমাকে ভীষণ শোকাহত করেছিলো, সে এইভাবে হারিয়ে যাবে আমি এমনটা মেনে নিতে পারছিলাম না। যখন পড়লাম

ছোট্ট সুপ্রভা। তোমার প্রসঙ্গ অপেক্ষা উপন্যাসে আর আসবে না। কারণ তোমার জন্যে কেউ অপেক্ষা করে থাকবে না। মৃত মানুষদের জন্যে আমরা অপেক্ষা করি না।

তখন আমার এই কোমল হৃদয়ে প্রচন্ড পরিমাণ মেঘ এসে জমা হয়েছিলো, আমার মনের আকাশে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছিলো। ইশ, তা যদি আমি ব্যাখ্যা করতে পারতাম। হ্যাঁ, তবে খুশির বিষয় হলো তবুও অপেক্ষা উপন্যাসে সুপ্রভা বার বার এসেছে, সে ছিলো।

আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, একটা বই কিভাবে এতো বাস্তব হতে পারে? কিভাবে হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করতে পারে? বোধগম্য হয় আপনার? আমার বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদ স্যার কেনো এতো বিখ্যাত তা যদি সত্যিই জানতে চান একবার হলেও অপেক্ষা পড়ে দেখা উচিত। মন শক্ত করে একবার অপেক্ষা পড়লে বার বার পড়তে মন বলবে। কিছু বই থাকে না? যেগুলো বার বার পড়ার ইচ্ছা হয়? সত্যি বলছি এই বইয়েও সেইরকম তৃষ্ণা রয়ে যাবে। অপেক্ষা নামক তৃষ্ণা।