স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন বিখ্যাত হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক এবং ভারতীয় সংস্কৃতির একজন শক্তিশালী প্রচারক। তিনি ১৯ শতকের শেষ ভাগে এবং ২০ শতকের শুরুতে ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমরা যদি কমপ্লিট ওয়ার্কস অফ স্বামী বিবেকানন্দের ভলিউম নম্বর নাইনের নিউজ রিপোর্টস হইতে ইন্ডিয়ান নিউজ রিপোর্ট পার্টের মাদুরা মেইল, ২৮ জানুয়ারি, ১৮৯৩ অনুসরণ করি দেখা যাবে বৈদিক ধর্মে লেখা আছে যে, ব্রাহ্মণরা এক সময় গরুর মাংস খেতো এবং শূদ্রদের বিয়ে করতো। অতিথিদেরকে খুশি করার জন্য গরুর বাছুর হত্যা করা হতো। শূদ্ররা ব্রাহ্মণদের জন্য গরুর মাংস রান্না করতো। সেই সাথে পরিষ্কার ভাবে লেখা আছে কমপ্লিট ওয়ার্কস অফ স্বামী বিবেকানন্দে যে, হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ঋষিরা খাদ্যের ব্যাপারে কোনো পার্থক্য বা বিধিনিষেধ পালন করতো না।
ঋগ্বেদ কি?
ঋগ্বেদ হলো হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি। এটি বেদ নামে পরিচিত চারটি আনুশাসনিক ধর্মগ্রন্থের প্রথম এবং সবচেয়ে প্রাচীন অংশ। ঋগ্বেদ মূলত দেবতাদের প্রশংসা ও প্রার্থনা করা স্তোত্র বা মন্ত্র নিয়ে গঠিত।
কেনো ঋগ্বেদ গুরুত্বপূর্ণ?
ঋগ্বেদ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি যা আজও মান্যতা পায়। সেই সাথে সভ্যতার উৎস হিসাবেও ঋগ্বেদকে ধরা হয়। ঋগ্বেদের মধ্য দিয়ে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ধর্ম, দর্শন, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের ভাষা ও কাব্যিক গঠন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এটি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং ঋগ্বেদে আছে প্রাচীন ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন দিকের চিত্র।
ঋগ্বেদে গরুর মাংস খাওয়ার অনুমতি
ইন্দ্রদেব হিন্দু ধর্মের একজন প্রধান দেবতা। তিনি স্বর্গের রাজা এবং দেবতাদের রাজা হিসেবে পরিচিত। ঋগ্বেদে তাকে বর্ষণ, বজ্রপাত এবং যুদ্ধের দেবতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইন্দ্রকে দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। ঋগ্বেদ খেয়াল করলে দেখা যাবে ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৮৬ তম সূক্তের ১৩ নম্বর মন্ত্রটিতে পরিষ্কার ভাবে ইন্দ্রদেবকে গরুর মাংস খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উপরের চিত্রটিতে ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৮৬ তম সূক্তের ১৩ নম্বর মন্ত্রটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে পরিষ্কার যা লেখা আছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
হে বৃষাকপিবনিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা এবং আমার সুন্দরী পুত্রবধূ। তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন, তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।
ঋগ্বেদের মন্ত্রটির অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ইন্দ্রদেবকে সরাসরি গরুর মাংস খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রথম অংশ:
- হে বৃষাকপিবনিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা এবং আমার সুন্দরী পুত্রবধূ: এই অংশে একজন স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার ধনসম্পদ, সন্তান ও সৌন্দর্যের প্রশংসা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশ:
- তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন, তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন: এই অংশে ইন্দ্রকে বৃষ এবং হোমদ্রব্য ভক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।
বৃষ কাকে বলে?
বৃষ শব্দটি সাধারণত গৃহপালিত একটি প্রাণীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সহজ ভাবে বললে বৃষ হলো পুরুষ গরুর প্রাপ্তবয়স্ক রূপ। হিন্দু ধর্মের ত্রিমূর্তির অন্যতম দেবতা মহাদেব শিবের বাহন হিসাবেও যাকে বলা হয়ে থাকে।
উপসংহার
ঋগ্বেদে উল্লেখিত তথ্যগুলো আজকের হিন্দু সমাজের অনেকের ধারণার বিপরীত, তারা নিজেদের মন মতো মডিফাই করে ধর্ম পালন করছে।