সময়, এই অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকে ছুঁয়ে যায়, সবকিছুকে বদলে দেয়। এক মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি, মানুষ, চিন্তা-ভাবনা, সবই নতুন রূপ ধারণ করে। যেমন শিশুকালের সরলতা যৌবনের উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়, আবার যৌবনের উত্তাপ বয়স্কদের শান্তিতে রূপান্তরিত করে। প্রকৃতিও এই নিয়মে বদ্ধ।
ফুল ফোটে, মরে যায়, গাছ বড় হয়, পাতা ঝরে। সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি সবকিছুই সময়ের সাথে নিরন্তর পরিবর্তনের চাকায় ঘুরতে থাকে। এই পরিবর্তন কখনো মৃদু, কখনোবা আকস্মিক। কিন্তু একটা বিষয় অটল, সেটা হলো পরিবর্তনই একমাত্র স্থায়ী। আমরা সবাই এই পরিবর্তনের অংশ, এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখতে হবে। কারণ সময় থামে না, সে চলতে থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
আমি কি তোমাদের ভুলে গিয়েছি?
হঠাৎ করেই গতকাল সন্ধ্যায় পুরনো রাস্তাটা চোখে পড়লো। আজ থেকে প্রায়ই বহু বছর আগে এইখানেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি। পাশেই গার্লস স্কুল আর ছাত্রী নিবাস। আমার বন্ধু গুলোর ভিড় এইখানেই বেশী হতো। বলতে গেলে এই তিন রাস্তার মোড়টা ভীষনই অদ্ভুত। নিজের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতির বোঝা, মনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে দিনের শেষে। পায়ে পায়ে ইংরেজি শিক্ষকের বাড়ি। সেই বাড়িতেই তো ইংরেজি শিখতে যেতাম। খুব পরিষ্কার মনে আছে। একটা মেয়ে ছিলো সেখানে, ভীষণ কোমল স্বভাবের। রাধারানীর মতো ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি নিয়ে কেমন প্রেম প্রেম মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু আমাদের কখনো কথা হয়নি, আমি একটু লাজুক স্বভাবের ছেলে কিনা।
শিক্ষকের বাড়ির সামনেই নতুন করে একটি মসজিদ হয়েছে, সুন্দরের এক নতুন সংজ্ঞা! তাজমহলের মতো জমকালো, মন মুগ্ধ করে। সাদা মোহরের মতো চকচকে, আকাশ ছুঁয়েছে মিনার। মনে হয়, আল্লাহর এই ঘরটিই এখন শহরের নতুন আকর্ষণ। সব কিছু মিলিয়ে মনে হলো, জীবন যেনো এক চক্রাকার পথে চলছে। পুরনো স্মৃতি আর নতুন পরিবর্তন একসঙ্গে মিশে গিয়েছে। মন মুগ্ধকর আযান হচ্ছিলো। শুনতে পাওয়া যাচ্ছে হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাস সালাহ। মাগরিবের আযানের সাথে সাথেই মসজিদটিতে প্রবেশ করলাম। অযু করে, নামাজ সম্পূর্ণ করলাম। আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।
নবাবী বাদামি দুধ চা
নামাজ সম্পূর্ণ করে এক গলির রাস্তা দিয়ে কলেজের দিকে হাঁটতে থাকলাম। যে সময় আমি হাই স্কুলে পড়তাম তখন স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীতে এই রাস্তাতে ভীষণ ভিড় হতো। যায় হোক, সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম বেশ সুন্দর কিছু দোকান হয়েছে চায়ের। যদিও আমি চা, কফি খুব একটা খাই না। তবে আজ জানি না কেনো বসতে ইচ্ছা করলো চা খেতে। নবাবী বাদামি দুধ চা অর্ডার করলাম।
নবাবী বাদামি দুধ চা হলো একটি বিশেষ ধরনের চা, যেখানে দুধের সাথে বাদামের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর পানীয় তৈরি করা হয়। এই চা’টি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বাদাম, যেমন কাজুবাদাম, এবং পিস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি একটি জনপ্রিয় পানীয় এইখানকার, বিশেষ করে শীতকালে এটার খুব জনপ্রিয়তা। নবাবী বাদামি দুধ চা সাধারণত সকালের নাস্তায় বা দুপুরের খাবারের পর পান করা হলেও আমি একটু অদ্ভুত টাইপের মানুষ, আমি সন্ধ্যা বেলাতেই নিয়ে বসে গেলাম। এই চা’টি শীতকালে শরীরকে গরম করে এবং গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা করে পান করা যায়। নবাবী বাদামি দুধ চা শুধু একটি পানীয় নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। এই চা’টি পান করে মানুষ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের স্পর্শ পায়।
উপসংহার
জীবন যেনো এক অবিরাম যাত্রা। পুরনো স্মৃতি, নতুন পরিবর্তন, এই দুইয়ের মিশেলেই গড়ে উঠে আমাদের জীবন। এই অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে সময় আমাদেরকে নতুন নতুন অধ্যায়ে নিয়ে যায়। একটি সরল কাপ চা, একটি পুরনো রাস্তা, একটি নতুন মসজিদ, এই সবই মিলে এক সুন্দর স্মৃতির জাল বুনেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়ে দেয় যে, পরিবর্তনই স্বাভাবিক।
আমাদেরকে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। পুরনো স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, জীবন চলতে থাকে, সময় থামে না।